গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি মাত্র তিন দিন। এবারে ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে হিসাবে শতকরা ৭৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিতে আছে। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঝুঁকির এ তালিকা করেছে গাজীপুর জেলা পুলিশ। এ তালিকাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন কেন্দ্রকে আমরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি। তবে গাজীপুর সিটি রাজধানীর সন্নিকটে হওয়ায় এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা ৪২৫টি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি। ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রার্থীর বাড়ির কাছের কেন্দ্র, যোগাযোগব্যবস্থাসহ কয়েকটি দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পাহারায় পুলিশ ও আনসারের ২৪ জন সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ১২ জন অস্ত্রধারী ও বাকি ১২ জন লাঠিসহ অবস্থান করবেন। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে (ঝুঁকিমুক্ত) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ জন করে সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে রয়েছেন ১০ জন অস্ত্রধারী। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল থাকবে। নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে ভোটের আগে-পরে মোট চার দিনের জন্য গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৫৮টি টিম ও ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রার্থী বা প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত কেন্দ্র, অতীতে যেসব কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল, যেসব কেন্দ্রের যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ এবং এলাকার গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের নিজ নিজ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে সাড়ে ৬ হাজার ভোটার রয়েছেন। এ ওয়ার্ডের কানাইয়ায় তার বাড়ি। আর তার বর্তমান বাসভবন ছয়দানার হারিকেন ফ্যাক্টরিসংলগ্ন। বাসভবনসংলগ্ন এ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে হাসান সরকারের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩৭ হাজার। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপির সহসভাপতি এম এ মান্নান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের ভোট কেন্দ্র দুটিও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। জানা গেছে, কাশিমপুরের ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪টি কেন্দ্রের সব কটিই ঝুঁকিপূর্ণ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২টি সাধারণ। সাধারণ কেন্দ্র দুটি সারদাগঞ্জ মেরি গোল্ড হাইস্কুলে অবস্থিত। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্রের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২টি সাধারণ। এ কেন্দ্র দুটি বাগবাড়ী হাক্কানিয়া সালেহিয়া আলিম মাদ্রাসায় অবস্থিত। এ ছাড়া কাশিমপুরে অবস্থিত ৬; কোনাবাড়ীর ১১; বাসনের ১৩, ১৪ ও ১৬; সালনার ১৯, ২০, ২১ ও ২২; জয়দেবপুরের ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ এবং গাছার ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সব কটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া টঙ্গীর ৪৩, ৪৬, ৪৯, ৫০, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এর বাইরে ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩৭, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৫১, ৫২, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণের পাশাপাশি সাধারণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বরত রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘এবারের সিটি নির্বাচনের পরিবেশ এখনো ভালো। তবে নির্বাচনের দিন ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
গাজীপুরে ভোটের দিন সব কলকারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশ : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ জুন ভোটের দিন ভোটারদের ভোট প্রদানের সুবিধার্থে গার্মেন্টস, স্পিনিং মিলসহ সব ধরনের কলকারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল নির্বাচন কমিশনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমই, বিআরটিএ, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেছে ইসি। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় নির্বাচন কমিশন ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে করে ওই দিন গাজীপুরের সব কলকারখানা বন্ধ থাকে। নির্বাচনের পরে যে কোনো এক ছুটির দিনে কারখানা খোলা রেখে ব্যবসায়ীদের পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কমিশন পরামর্শ দিয়েছে। সব কলকারখানা বন্ধ আছে কি নেই তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসি জানিয়েছে, ২৫ জুন রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন মধ্য রাত পর্যন্ত জরুরি সার্ভিস ব্যতীত অন্য সব যানবহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই সময়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় মালামাল পরিবহনও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া ২৩ জুন মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।